
ছবি সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী নাফিছা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ভিকটিমের প্রতিবেশি ঘাতক মো. জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামির দেখানো মতে এবং পুলিশের তল্লাশিকালে হত্যাকাণ্ডের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার (১৬ জুন) পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম আপসার ও কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা শুধু স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ৬টি টিম গঠন করি। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জায়গা এবং নারীঘটিত কিছু বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় আমরা জুনেল মিয়াকে আটক করি। পরবর্তীতে তার মোবাইল চেক করে পর্ন সাইটে ব্রাউজিংয়ের তথ্য দেখে আমাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ভিকটিম তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুল ও প্রাইভেটে আসাযাওয়া করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া ভিকটিমের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ঘটনার দিন ভিকটিম পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে আসামির বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে আসামি ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তার পিছু নেন। ভিকটিম এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল মিয়া ভিকটিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। তখন ভিকটিম চিৎকার করলে জুনেল মিয়া তার হাত দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরলে ভিকটিম ঘটনাস্থল কিরিম শাহ মাজারের মধ্যের রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমকে মোকাম-সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে ঝোপে ফেলে রাখেন।
পুলিশ সুপার বলেন, মোকামের মাঠে পড়ে থাকা ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে ফেলে দেন এবং ভিকটিমের পরিহিত বোরকাটি নিকটবর্তী কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে জনৈক রওশন আলীর পারিবারিক কবরস্থানের সীমানা বাউন্ডারী পার করে ছুড়ে ফেলেন। পুলিশ আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার রাতে স্থানীয় লোকজন এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতে ভিকটিমের সেই বোরখা উদ্ধার করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ৭টায় পাশের সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হন নাফিছা। এ বিষয়ে কুলাউড়ায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
এর দুই দিন পর শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বাড়ির পাশের ছড়ার পাশে দুর্গন্ধ পেয়ে ভিকটিমের ভাই ও মামা অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মরদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় থানায় ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।