মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, আষাঢ় ৩০ ১৪৩২

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রত্যন্ত আলো থেকে উঠে আসা এক অনন্য প্রতিভা

মঞ্চে জীবন, লোকগানে প্রাণ: সংগ্রামী এক তরুণ তুষার অনুরাগীর গল্প

দিপংকর বনিক

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ১৪ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৫:২০, ১৪ জুলাই ২০২৫

মঞ্চে জীবন, লোকগানে প্রাণ: সংগ্রামী এক তরুণ তুষার অনুরাগীর গল্প

নাটকের চরিত্রে নারী রূপে তুষার অনুরাগী; ডানদিকে তাঁর স্বাভাবিক রূপ

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগরের প্রত্যন্ত রনারচর গ্রাম থেকে উঠে আসা তুষার দাস এখন আর কেবল একজন সাধারণ যুবক নন। লোকসংস্কৃতি ও মঞ্চনাটকের প্রতি অগাধ ভালোবাসা নিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এক ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব—জনপ্রিয় নামে যিনি পরিচিত ‘তুষার অনুরাগী’ হিসেবে।

শুরুটা ছিল ‘ঢপ যাত্রা’ দিয়ে

তুষারের মঞ্চে পথচলা শুরু অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়, একটি ঢপ যাত্রায় নারী চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তখন সমাজের নানা কটাক্ষ, বিদ্রূপ ও অবজ্ঞার শিকার হতে হয়েছিল তাকে। তবুও থেমে যাননি। বরং নিজের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন নিজেকে একজন পরিপক্ব মঞ্চশিল্পী ও সাংগঠনিক কর্মী হিসেবে।

 বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই 

তুষারের পারিবারিক অবস্থা ছিল অপ্রতুলতার এক নির্মম চিত্র। বাবা ক্ষিতিশ চন্দ্র দাস একজন দিনমজুর, দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছেন। মা নমিতা রানী তালুকদার গৃহিণী। সংসারের প্রয়োজনে তুষারের একমাত্র ছোট বোনকে কম বয়সেই বিয়ে দিতে হয়। অর্থাভাবে দিরাই সরকারি ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি পর্যন্তই পড়ালেখা করতে পেরেছেন তুষার।

‘সুরমা তীরের ধামাইল দল’: নিজের হাতে গড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন

তুষার বর্তমানে যুক্ত আছেন ‘খাঘাউড়া জয় বাবা লোকনাথ নাট্য সংঘ’-এর সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘সুরমা তীরের ধামাইল দল’, যেখানে ৬ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ সদস্য রয়েছেন। এই দলটি ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মান

লোকজ ধারার প্রতি ভালোবাসা শুধু স্থানীয় মঞ্চেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মোহনপুরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নিয়ে তুষার পেয়েছেন সম্মাননা। এছাড়াও তিনি নিয়মিত পারফর্ম করছেন সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সমাজ বদলের অনুপ্রেরণা

নাট্য সংঘের প্রবীণ সদস্য রিবেন তালুকদার বলেন, “তুষার অনুরাগীর সাহস, নিষ্ঠা আর মঞ্চের প্রতি ভালোবাসা আজকের তরুণদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজ একসময় যাকে অবজ্ঞা করত, আজ সেই তুষারই সমাজ বদলের অনুপ্রেরণা।”

“সঙ্গীতই আমার প্রাণ, অভিনয় আমার আত্মা”

তুষার বলেন, “সঙ্গীতই আমার প্রাণ, অভিনয় আমার আত্মা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মঞ্চের সঙ্গেই থাকতে চাই। সরকার থেকে যদি কিছু সহায়তা পেতাম, বাবা-মায়ের সুচিকিৎসা ও সেবায় কাজে লাগাতে পারতাম।”

সংস্কৃতির মঞ্চে এক তুষার ঝড়

তুষার অনুরাগীর জীবন যেন এক জীবন্ত কাহিনি—সংগ্রাম, প্রতিভা আর স্বপ্নের সম্মিলনে তৈরি। বাংলাদেশের মফস্বল শহর ও গ্রামাঞ্চলে এমন বহু প্রতিভা লুকিয়ে আছে, যাদের পথচলার পেছনে প্রয়োজন কেবল একটু সহায়তা, সাহস আর স্বীকৃতি। তুষার সেই আলো হয়ে উঠেছেন, যা অনেক তরুণের জন্য হয়ে উঠতে পারে নতুন দিগন্তের দিশা।

 

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়