
ছবি সংগৃহীত
ভারতের হিন্দু পুনরুত্থানবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের প্রচারক থাকাকালীন বিয়ে করার কোনো নিয়ম নেই। কট্টর হিন্দুত্ববাদী এ সংগঠনটির একজন প্রচারক ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তার মতো আরও বহু রাজনীতিবিদ এ সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন। তবে এদের অনেকেই পরবর্তীতে সংসার জীবন বেছে নিয়েছেন।
সবশেষ এ তালিকায় নাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাবেক সভাপতি ও দলটির পরিচিত মুখ দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার সন্ধ্যায় দলীয় সহকর্মী রিঙ্কু মজুমদারকে বিয়ে করেছেন তিনি। আর এর পরপরই প্রশ্ন উঠেছে- হিন্দুত্ববাদী আরএসএস প্রচারকদের বিয়ের নিয়ম না থাকার পরও কোন নিয়মে বিয়ে করেন তারা।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা।
আরএসএসের নিয়ম অনুযায়ী একজন প্রচারককে সম্পূর্ণ সময়টাই সংগঠনের কাজে দিতে হয়। পরিবার প্রতিপালনের জন্য যদি সময় বের করতে হয়, তাহলে সংগঠনকে পুরো সময় দেওয়া সম্ভব নয় বলেই প্রচারকদের বিয়ে করার নিয়ম নেই।
বাংলা, ওড়িশা, সিকিম ও আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে আরএসএসের যে ক্ষেত্র, তারই সহ-ক্ষেত্র প্রচার প্রমুখ ড. জিষ্ণু বসু বলেন, ‘একজন প্রচারককে পুরো সময়টাই সঙ্ঘের কাজে দিতে হয়। তাই আলাদা করে পরিবারকে দেওয়ার মতো সময় প্রচারকের থাকে না। সে জন্যই দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গুরুজী মাধব গোলওয়ালকরের সময় থেকেই প্রচারকদের বিয়ে না করার নিয়ম রয়েছে।’
‘আবার সঙ্ঘের মাসিক অর্থায়নেই তার দৈনন্দিন খরচ চলে। তাই কোনো প্রচারককে যখন রাজনীতি করতে পাঠানো হচ্ছে, তখন তো তিনি আর সঙ্ঘের কাজ করছেন না, তার দৈনন্দিন খরচও সেই রাজনৈতিক দলকেই দিতে হবে। তাই প্রচারকও আর তিনি থাকতে পারবেন না,’ ব্যাখ্যা করছিলেন ড. বসু।
এই নিয়ম অনুযায়ীই দিলীপ ঘোষকে যখন বিজেপির সভাপতি হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয় ২০১৫ সালে, তখন থেকেই তিনি আর সঙ্ঘের প্রচারক নন।
তার পরে তিনি ২০১৬ সাল থেকে বিধানসভার সদস্য ও ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন, সেখান থেকে ভাতা পেতেন তিনি। অন্য কোনওভাবে অর্থের সংস্থান তৈরি হলেও প্রচারক থাকা যায় না।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যোগ করলেন, ‘সঙ্ঘ থেকে যাদের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক করে পাঠানো হয়, তারা আর প্রচারক থাকতে পারেন না। তবে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক – সংগঠন হয়ে যারা আসেন, তারা প্রচারকই থাকেন।’
‘তাই দিলীপদার তো বিয়ে করতে কোনো বাধা ছিল না,’ বলছিলেন আরএসএস এবং বিজেপির একাধিক নেতা।
বাজপেয়ি, আদভানি, মোদিও ছিলেন আরএসএস প্রচারক
বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়ি, প্রথম তিন সাধারণ সম্পাদকের অন্যতম লাল কৃষ্ণ আদভানি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনজনই আরএসএসের প্রচারক ছিলেন।
মি. বাজপেয়ি এবং মি. মোদি বিয়ে করেননি। যদিও জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা যশোদাবেনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বিয়ে হয় ১৭ বছর বয়সে। কিন্তু বহু বছর ধরে তারা আর একসঙ্গে থাকেন না। পরে মোদিও আর নতুন করে বিয়ে করেননি।
‘তবে লাল কৃষ্ণ আদভানি সংসারজীবনে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই তিনি প্রচারকের জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এ রকম বহু উদাহরণ আছে, যারা সঙ্ঘের প্রচারক থেকে সংসারী জীবনে ফিরে গেছেন,’ জানাচ্ছিলেন ড. জিষ্ণু বসু।
তার কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গে হয়তো সংখ্যাটা কম, কিন্তু মহারাষ্ট্র বা ওড়িশার মতো রাজ্যে এ রকম উদাহরণ কয়েকশ। তারা একটা সময়ে প্রচারক হিসাবে সঙ্ঘে থেকেছেন, তারপরে মনে হয়েছে সংসার করবেন, তাই তারা প্রচারকের দায়িত্ব থেকে সরে গেছেন।’
সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতা বলেছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ চেনেন, এমন অন্তত দুজন সঙ্ঘ-প্রচারকের কথা বলতে পারি- যারা পরবর্তীতে সংসারী হয়েছেন। একজন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, আরেকজন অরবিন্দ মেনন।’