ছবি সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের রাজধানীতে আশ্রয়ে আছেন। বাংলাদেশে অনুপস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায় কার্যকর করতে হলে ভারতকে তাঁকে ফেরত পাঠাতে হবে, আর সেখানেই তৈরি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে নতুন উত্তেজনা।
২০২৪ সালের ছাত্র বিক্ষোভ ও সরকারের পতন
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র বিক্ষোভ দ্রুতই দেশব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয়। জাতিসংঘ জানায়, দমন–পীড়নে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হন। এই সহিংসতা আন্দোলনকে থামাতে পারেনি, বরং সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ায়। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটে এবং তিনি ভারতের দিকে পালিয়ে যান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান মনে করেন, দেশ ছাড়াটা নিজেই তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক যাত্রা: ট্র্যাজেডি থেকে ক্ষমতার শীর্ষে
শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা রাজনৈতিক ট্র্যাজেডির ভেতর দিয়ে উঠে আসেন। ১৯৭৫ সালে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এরপর তিনি ছয় বছর নির্বাসনে ছিলেন।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন। দীর্ঘদিন প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যেই তাঁর উত্থান ঘটে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন এবং ২০০৮ সালে দ্বিতীয় দফায় ফিরে এসে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। তাঁর সময়ে বড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও স্বৈরাচারী শাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক দমন–পীড়নের অভিযোগ বাড়তে থাকে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ও মৃত্যুদণ্ড
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার করে। অভিযোগ ছিল বিক্ষোভকারীদের হত্যায় উসকানি, ফাঁসির নির্দেশ, এবং দমন–পীড়নে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি। আদালত রায়ে বলেন, তিনি সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালতকক্ষে করতালি ও আবেগ দেখা যায়।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, শেষ ন্যায়বিচার হবে রায় কার্যকর হলে।
ভারতের অবস্থান: কেন দিল্লি দ্বিধায়
ভারত শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। সীমান্ত সুরক্ষা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তায় তাঁর ভূমিকা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন তাঁকে ফেরত পাঠানো হলে দেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নিরাপত্তা–সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে বলে দিল্লিতে উদ্বেগ আছে।
ভারতের প্রত্যর্পণ আইনে ‘রাজনৈতিক অপরাধে’ ব্যতিক্রম রয়েছে। দিল্লি চাইলে এই ধারার ভিত্তিতে তাঁকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুণায়েত মনে করেন, ভারত তাঁকে এখনই পাঠাবে না, কারণ তাঁর সামনে এখনো সুপ্রিম কোর্টে আপিলসহ আন্তর্জাতিক আইনি পথ খোলা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন অনিশ্চয়তা
রায় ঘোষণার দিনেই ঢাকা দ্রুত প্রত্যর্পণের অনুরোধ করেছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতি দেশকে আরও উত্তেজিত করেছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, নেতৃত্ব ছত্রভঙ্গ। দেশে এখন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার চললেও রাজনৈতিক বিভাজন গভীর।
বিএনপি এবং ছোট দলগুলোর সামনে নতুন সুযোগ তৈরি হলেও দীর্ঘমেয়াদি বিভেদ সহজে মিলবে না বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
সামনে কী অপেক্ষা করছে
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অধ্যায় কার্যত শেষের পথে। কিন্তু তাঁর বিদায় কি পুরোনো সংঘাতের সমাপ্তি ঘটাবে, নাকি দেশে অনিশ্চয়তার নতুন পর্ব শুরু হবে—এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।































