
ছবি সংগৃহীত
ঈদুল ফিতরের পরের মাসেই ব্যাংকে ফিরেছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। ঈদের মাসে সাধারণত বাড়তি খরচের কারণে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা দেখা যায়। এ কারণে মার্চ মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থ বেড়েছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তবে এর পর তা দ্রুত ব্যাংকে ফিরে এসেছে। এ ছাড়া আমানত পরিস্থিতিরও উন্নতি হতে শুরু করেছে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা
বলছেন, ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে অর্থনীতির জন্য তা ক্ষতিকর হয়। এতে টাকার লেনদেন বা হাত বদলের গতি কমে এবং ‘মানি ক্রিয়েশন’ ব্যাহত হয়। অন্যদিকে, ব্যাংকে টাকা ফেরার অর্থ হলো তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি এবং বিনিয়োগে সহায়ক পরিবেশের সৃষ্টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুদের হার বৃদ্ধি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। বিশেষ করে পতিত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে আগের আমলের ব্যাংক খাতের লুটপাট ও অনিয়মগুলো প্রকাশ্যে আসে, যা জনগণের আস্থার সংকটে বড় প্রভাব ফেলেছিল। ফলে ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তোলার চাপ ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছিল। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নগদ অর্থ ব্যাংকে ফেরার ধারা শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকায়, যা এক মাস আগেও ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ কমেছে ১৯ হাজার ৬৫ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে ঈদের কারণে মার্চ মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বেড়েছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তার আগের ছয় মাস ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা কমেছিল।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি, মার্চে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি, এপ্রিলে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি, মে মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি, জুনে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি, জুলাইয়ে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৩০ কোটি এবং আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ টাকায়। তবে সেপ্টেম্বর থেকে সেটি কমতে শুরু করে।
অন্যদিকে, গত এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। এক মাস আগে মার্চে যার পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ১৮ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। আগের মাস মার্চে ব্যাংকগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ আমানত বেড়েছিল, প্রায় ২৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এদিকে গত এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। মার্চে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।