ছবি সংগৃহীত
বাংলা সিনেমা জগতে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৫৬ সালের আজকের দিনে বাংলায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র 'মুখ ও মুখোশ' মুক্তি পেয়েছিল।
আবদুল জব্বার খান পরিচালিত 'মুখ ও মুখোশ' ছবিটি রূপমহল সিনেমা হলে উদ্বোধন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক।
১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে ড. সাদেক একটি সভা আহ্বান করেছিলেন। তখনও পূর্ব পাকিস্তানে চলতো ভারতীয় বাংলা, হিন্দি, পশ্চিম পাকিস্তান ও হলিউডের ছবি। বাংলাদেশে তখনো কোনধরনের বাংলা ছবি নির্মাণ করা হতো না।
সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন গুলিস্তান সিনেমা হলের মালিক অবাঙালি খানবাহাদুর ফজল আহমেদ। তিনি বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের আর্দ্র আবহাওয়ায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এ কথার প্রতিবাদ করে আবদুল জব্বার খান বলেছিলেন, এখানে তো ভারতীয় ছবির শুটিং হয়েছে। তবে কেন পূর্ণাঙ্গ একটি ছবি করা যাবে না কেন? সভায় তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, ছবি করে দেখাবেন তিনি।
আবদুল জব্বার খান চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু চলচ্চিত্রের ‘চ’ও জানতেন না। কী করে নির্মাণ হবে ছবি?
অথচ, ১৯৫৩ সালেই নিজের লেখা 'ডাকাত' নাটক নিয়েই তৈরি করে ফেলেন চিত্রনাট্য। কলকাতা থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এনেছিলেন মরচে ধরা পুরোনো এক ‘আইমো’ ক্যামেরা। শব্দ ধারণের জন্য ব্যবহার করেছিলেন ফিলিপসের একটি সাধারণ টেপরেকর্ডার।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে খোঁজা হলো নারী অভিনয়শিল্পী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্রী জহরত আরা ও ইডেন কলেজের আইএর ছাত্রী পিয়ারী বেগম যোগাযোগ করেন পত্রিকার সেই বিজ্ঞাপন দেখে। সাথে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার শিল্পী পূর্ণিমা সেনগুপ্ত। এবং তিনিই নায়িকা (কুলসুম) চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। নায়ক আফজালের বোন রাশিদার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পিয়ারী। সিনেমার পরিচালক ছিলেন আফজাল নিজেই। ডাকাতসর্দারের ভূমিকায় ছিলেন অট্টহাসির জন্য বিখ্যাত ইনাম আহমেদ।
বুড়িগঙ্গার ওপারে কালীগঞ্জ, লালমাটিয়ার ধানখেত, তেজগাঁওয়ের জঙ্গল, জিঞ্জিরা ও টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে চলতে থাকে ছবির শুটিং। যা শেষ হয় ১৯৫৫ সালের ৩০ অক্টোবর। লাহোরের শাহনুর স্টুডিওতে ছবির মুদ্রণ, পরিস্ফুটন ও সম্পাদনার কাজ হয় । ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন সমর দাস; গান গেয়েছিলেন মাহবুবা হাসনাত ও আবদুল আলীম এবং নৃত্য পরিচালনা করেন গওহর জামিল।
বাধা হয়ে দাঁড়ায় ঢাকার পরিবেশকেরা। তারা ছবিটি মুক্তি দিতে রাজি হননি। শেষে ‘পাকিস্তান ফিল্ম ট্রাস্ট’ ও ‘পাকিস্তান ফিল্ম সার্ভিস’ ছবিটি পরিবেশনার দায়িত্ব নেয়।
ঢাকার রূপমহলে হয় উদ্বোধনী প্রদর্শনী। ৪টি প্রিন্টের বাকি তিনটি দেখানো হয় চট্টগ্রামের নিরালা, নারায়ণগঞ্জের ডায়মন্ড ও খুলনার উল্লাসিনী সিনেমা হলে। বাংলার প্রথম সিনেমা হিসেবে দর্শক খুবই ইতিবাচকভাবে ছবিটি গ্রহণ করেছিলেন।
এই 'মুখ ও মুখোশ'-এর পথ ধরেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প। সিনেমাটির আজ ৬৫ তম জন্মদিন। জন্মদিনে ছবিটির সব কলাকুশলীর প্রতি রইলো আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।