শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

টাকা ছাড়া হুইল ঘোরে না ঢামেকে !

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৭ জানুয়ারি ২০২০

আপডেট: ০৯:২২, ৭ জানুয়ারি ২০২০

টাকা ছাড়া হুইল ঘোরে না ঢামেকে !

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরকার বরাদ্দ করেছে হুইল চেয়ার । সেই হুইল চেয়ার এখন চলে নগদ টাকার বিনিময়ে ।ঢামেকের এই সব হুইল চেয়ার ভাড়া দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন সেখানকার বিভিন্ন নারী দালালরা ।হুইল চেয়ার দেয়ার বিনিময়ে তারা রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন নগদ টাকা। যার ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে রোগী এবং তাদের স্বজনদের। হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়,  হুইল চেয়ারগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন ঢামেকের কয়েকজন ওয়ার্ড মাস্টার । তারাই মূলত হাসপাতালের হুইল চেয়ারগুলো বেশ কয়েকজন নারীর হাতে তুলে দিয়েছেন । আর ওই নারীরাই হুইল চেয়ার নিয়ে ঢামেকের পুরাতন ভবনে, জরুরি বিভাগের সামনে ‘প্যাসেঞ্জার’ ধরার জন্য অপেক্ষা করেন। হাসপাতালে হুইল চেয়ার নিয়ে যারা অপেক্ষা করছে, তারা মনে করেন রোগীদের চেয়ারে বসাতে পারলেই টাকা । হুইল চেয়ারে বসার নির্ধারিত কোনো ভাড়া নেই। টাকা দিতে হয় ওই নারী দালালদের প্রত্যাশা অনুযায়ী। টাকা না দিলে রোগী ও তার স্বজনদের অপমান করা হয়। দুপুর দুইটার পর বহির্বিভাগ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হুইল চেয়ার বহনকারীরা নারী দালালরা একযোগে জরুরি বিভাগে অবস্থান করে। বেসরকারি একটি কোম্পানির ম্যানেজার রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (ছদ্মনাম)বলেন, আমার মা সালমা বেগমের বয়স ৫৬ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে কয়েক দিন আগে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাই। বিকেলের দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সিএনজি থেকে নামার পর মধ্যবয়সী এক নারী হুইল চেয়ার নিয়ে এগিয়ে আসে। বলে, স্যার মা-কে নিয়ে আসছেন, বয়স্ক মহিলা হাঁটতে পারবেন তো? আমার হুইল চেয়ারে বসান। ওনার কথা শুনে মাকে ধরে তার হুইল চেয়ারে বসাই। পরে জরুরি বিভাগ থেকে আমার মা-র নামে একটি টিকিট নিলাম ১০ টাকা দিয়ে। ‘এরপর ইমারজেন্সিতে ডাক্তারকে দেখাই। ওনি রেফার করেন মেডিসিন ওয়ার্ডে। হাসপাতালে কোনো কিছুই কিন্তু আমি চিনি না। ওই মহিলাই আমাকে সব চিনিয়ে দিচ্ছেন। পরে মেডিসিনে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। হাসপাতালে এক্সরে করিয়ে ওই হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় মাকে নিয়ে আবার ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বলেন, আপনার মা বয়স্ক, কিছু সমস্যা আছে। তবে, এগুলো তেমন গুরুতর নয়। কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি। ঠিক হয়ে যাবে। এর পর আসি  জরুরি বিভাগে । ওই নারীর হুইল চেয়ারে বহন করে আমার মা-কে জরুরি বিভাগের সামনে থেকে একটি সিএনজিতে তুলে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি খুশি হয়ে তাকে ৫০ টাকা দিলাম। এই টাকা দেখে ওই ভদ্রমহিলা চেঁচিয়ে উঠেন। কি, ভিক্ষা দিলেন নাকি? আমরা কি ভিক্ষুক নাকি? এত কষ্ট করে আপনার মাকে বহন করলাম কি মাগনা মাগনা? পরে বাধ্য হয়ে তাকে ৩০০ টাকা দিতে হলো।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন হুইল চেয়ার নিয়ে ঘোরে বেড়ায়। পারুল, শারমিন, মমতাজ, রত্না ও শাহানাজ তাদের মধ্যে অন্যতম। তাদের লক্ষ্য থাকে, রোগীদের হুইল চেয়ারে বসিয়ে টাকা আদায় করা। চাহিদামতো টাকা না পেলে তারা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। জানতে চাইলে পুরাতন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান ও আবুল বাশার আর নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল হোসেন হুইল চেয়ার নিয়ে নৈরাজ্যের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকা বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা জানান, ওয়ার্ড মাস্টাররা কখনোই এসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে তারা নারী দালালদের হুইল চেয়ার নিয়ে এমন নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তারা জানান, হুইল চেয়ারকে ঢাল বানিয়ে রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। হাসপাতালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্যরা একটু তৎপর হলেই নারী দালালদের রোধ করা সম্ভব। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মোসলেম উদ্দিন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালের পরিচালকের নির্দেশে কয়দিন পর পরই হুইল চেয়ারের দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এক মাস আগেও হুইল চেয়ার দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৪টি হুইল চেয়ার জব্দ করে হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পে জমা দেওয়া হয়েছিল। আবার নির্দেশ পেলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। আলোআভানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরএ      
শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়