শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

অবলোকন করুন সুন্দরবনের সৌন্দর্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২৫ অক্টোবর ২০২২

অবলোকন করুন সুন্দরবনের সৌন্দর্য

ছবিঃ সংগৃহীত

ভ্রমনের সেরা গন্তব্য পৃথিবীর একমাত্র একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন। অমোঘ আকর্ষন, নিঝুম নান্দনিকতা, মায়াবী সৌন্দর্য্য এবং প্রকৃতির সেরা রহস্য এই সুন্দরবন। মহান আল্লাহ অফুরন্ত দানের ভান্ডার শ্বাসমূলীয় এই বন। সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ‘Mangrove forest’ অর্থাৎ শ্বাসমূলীয় বনভূমি। বাংলাদেশের অহংকার সুন্দরবন।

সুন্দরবন পৃথিবীর সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (largest mangrove forest of the world) বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। বনে অধিক পরিমাণে পাওয়া সুন্দরি বৃক্ষের জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন বাংলাদেশ ভারত যৌথভাবে সুন্দবনকে নিজেদের বুকে জায়গা দিয়ে রেখেছে।

প্রায় দশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারের অবস্থান বাংলাদেশে ৬০%। দেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালি, বরগুনা বাগেরহাট জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই বিস্তৃত বনাঞ্চলকে ইউনেস্কো (UNESCO) ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রতি বছরই নানান রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নিজের বুক পাতিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের (Bangladesh) উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করে চলেছে এই বনাঞ্চলটি। সুন্দরবনের ১,৮৭৪ বর্গ কিলোমিটারের জুড়ে রয়েছে নদি-নালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ন অঞ্চল। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম রাখা হয় সুন্দর বন।

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান-

কটকা- সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কাটকা অন্যতম। এটি সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। মাংলা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ৯০ কি. মি. দূরে অবস্থিত এবং সু্ন্দরবনের পূর্ব অভয়ারণ্যের মধ্যে প্রধান কেন্দ্র এটি। কাটকায় রয়েছে বনবিভাগের একটি রেস্ট হাউজ। এর আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় খাল। যেখানে নৌকা নিয়ে ভ্রমন করা যায় এবং সবচেয়ে কাছ থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের আসল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। খালের দুই ধারে দেখা যায় অসংখ্য চিত্রা হরিণ মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও বানর, উদবিড়াল, বনমুরগি নানান ধরনের পাখির বিচরন দেখা যায়। মাঝে মাঝে রাজকীয় ভঙ্গিতে বাঘের চলার দৃশ্য গর্জন শোনা যায়। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ  টাওয়ার থেকে দেখা যায় বন্য প্রানীর অপূর্ব সব দৃশ্য এবং বাঘের হরিণ শিকারের দৃশ্য যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে প্রতিনিয়ত।

করমজল- কেউ যদি অল্প সময়ের মধ্যে সুন্দর বন ভ্রমন করে ফিরে আসতে চান তাহলে তার জন্য সুন্দরবনের করমজল স্থানটি সবচেয়ে উপযোগী। কারণ করমজল স্থানটি মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে খুব নিকটবর্তী হওয়ায় মাত্র ৩ঘন্টার মধ্যে এটি ভ্রমন করে ফিরে আসা যায় এখানে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভ্রমন করতে আসে। এখানের প্রধান প্রধান আর্কষণ গুলো হলো: হরিণ, বানর, কুমির, নৌকা চালানো, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পশুর নদী, জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলাদেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রও এই করমজলে অবস্থিত যা পর্যটকদের দারুণ ভাবে আকর্ষণ করে।

হাড়বাড়িয়া- মংলা থেকে মাত্র ২০ কি. মি. দূরে হার বাড়িয়া নামক স্থানটি অবস্থিত। যার অপুরোপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই এই স্থানটির প্রধান আর্কষণ। এখানে কাঠের তৈরী দুইটা ট্রেইলসহ গোলাঘর, যার একটি পুকুর  সংলগ্ন, কাঠের তৈরী পুল ইত্যাদি রয়েছে এছাড়াও রয়েছে নানান প্রজাতির বন্য পশু পাখি উদ্ভিদের সমারোহ।

হিরনপয়েন্ট- মংলা থেকে প্রায় ১০০ কি.মি. দূরে অবস্থিত নীল কমল নামক স্থানটি। এটি সুন্দরবন দক্ষিণ অভয়ারন্যের একটি বিখ্যাত প্রশাসনিক কেন্দ্র এখানে সবচেয়ে বেশি হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও বাঘ, শুকুর, বানর, উদবিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, নানা বর্ণের পাখির ঝাক ইত্যাদিরও বিচরন লক্ষনীয়। নীল কমলের সামনে দিয়ে বয়ে গেছে একটি ছোট খাল। ১৯৯৭  খ্রিঃ ঘোষিত ৫২২ তম সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের ফলক এখানেই উম্মোচন করা হয়। এখানে রয়েছে বন বিভাগ কতৃক একটি রেস্ট হাউস যেখানে দর্শনার্থীদের থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে।

দুবলার চর- সুন্দরবনের সর্ব দক্ষিণে এই স্থানটি অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত এই দ্বীপটি মৎস্য আহরোণ প্রক্রিয়াজাত করণের এক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত এখানে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলেরা অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে এবং সাগরে মাছ ধরে এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করে। সুন্দরবনের মৎস সম্পদ সম্পর্কে ধারানা পেতে হলে এই স্থানটি সর্বোৎকৃষ্ট স্থান। এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় সমূদ্র সৈকত।

মান্দার বাড়িয়া- সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে অভয়ারণ্য অবস্থিত এখানকার গভীর অরণ্যে ছোট ছোট ক্ষুদ্র জীব থেকে শুরু করে রয়েছ বাঘ, হরিণ, বন্যশুকুর, বানর, কুমির, কচ্ছপ, সাপ, কাকড়া ইত্যাদির সমারোহ। এছাড়াও এই স্থানের আরো একটি আর্কষণীয় জিনিস হলো সাগরের বড় বড় ঢেউ। এখানে সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল বিশাল ঢেউগুলো দেখতে সত্যি খুবই মনমুগ্ধকর। এছাড়াও প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য জীব বৈচিত্রের ভরপুর দুর্গম স্থানটি।

ঢাকা থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা-

ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চ যাতায়াত করা যায়। সায়দাবাদ, গাবতলী থেকে সোহাগ, হানিফ এবং

ঈগল বাস প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা যেতে প্রায় ঘন্টা লাগে। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে

খুলনা যাবার বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ রয়েছে।

সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ

সাধারণ খরচ- খাবারের মান জাহাজের উপর নির্ভর করে। সাধারণত জনপ্রতি থেকে হাজার টাকা খরচ হয়। মাস খানেক আগে থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং নিশ্চিত করলে ভালো জাহাজ পাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন?

সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের কচিখালী, হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। নীলকমলে থাকতে চাইলে দেশি পর্যটকদের প্রতি কক্ষের জন্য তিন হাজার টাকা লাগবে আর বিদেশিদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষের জন্য লাগিবে তিন হাজার টাকা আর বিদেশিদের জন্য লাগবে পাঁচ হাজার টাকা। কটকাতে প্রতি কক্ষ নিতে দুই হাজার টাকা লাগবে এবং বিদেশিদের জন্য রুম প্রতি পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।

বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন আবাসিক হোটেল ব্যবস্থা নেই। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া মমতাজ হোটেলের আশেপাশে অন্য হোটেলগুলোতেঅ থাকার জন্য খোঁজ নিতে পারেন।

পশুর বন্দরে পর্যটকদের থাকার জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। মংলা বন্দরে থাকার জন্য রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল।

সাতক্ষীরা শহরে থাকতে চাইলে এখানে কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন। শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ডরমেটরিতে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।

খুলনা শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েল হোটেল, হোটেল ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

 

 

 

 

এইচ এস কে

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়