শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

শিশুদের নিয়ে ডুবে যাওয়ার উপক্রম তবু স্কুলে আশ্রয় দেননি শিক্ষক মুমিনুর

শংকর দত্ত, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৮ জুন ২০২২

আপডেট: ১১:১৫, ২৮ জুন ২০২২

শিশুদের নিয়ে ডুবে যাওয়ার উপক্রম তবু স্কুলে আশ্রয় দেননি শিক্ষক মুমিনুর

প্রধান শিক্ষক মুমিনুর রহমান

সুনামগঞ্জের ছাতকে স্মরনকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়ে লাখো পরিবার পানিবন্ধি। উপজেলার সব কটি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা সহ সরকারি অফিসে ছিল বন্যার্থদের উপচে পড়া ভিড়। যেখানে দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের মানুষেরা এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানে স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেয়নি স্কুলে আশ্রয়।

স্কুলে আশ্রয় না পাওয়া পারভীন বেগম জানিয়েছেন দুর্বিসহ সেই রাতের কথা- তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘ছোট শিশুদের নিয়ে আশ্রয়ের জন্য বাড়ির পাশে রাধানগর সরকারি প্রাইমারী স্কুলে গেলেও জায়গা হয়নি। ঘরে কোমর পানি প্রায় পাগলের মতো অবস্থা ছিল; জান যায় যায়। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আল্লাহকে ডাকছি আর কান্না করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় পাইনি। ঘরে ধান চাল সহ মূল্যবান জিনিস পত্র রেখে বাচ্চাদের নিয়ে পড়েছিলাম দূর্ভোগে।‘

ভয়াবহ বন্যায় স্কুলে আশ্রয় না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাতকের ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে।

পারভীন, শহীদ সহ গ্রামের লোকজন পরিবার নিয়ে দুর্বিপাকে পড়লে উপজেলার রাধানগর গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে যান একটুখানি আশ্রয়ের জন্য । তালাবদ্ধ দেখে স্থানীয় লোকজন প্রধান শিক্ষকের সাথে স্কুল খুলে দেয়ার জন্য ফোনে যোগাযোগ করেন।

শিক্ষক মুমিনুল ফোনের ওপাশ থেকে জানান,আমি সিলেটে গেটের চাবি আমার সাথে।

তিনি আরও বলেন- স্কুলের বাথরুম নষ্ট ও স্কুলের অবস্থা খারাপ করে রাখেন। খুলে দেয়া যাবে না। অথচ গত বন্যায় প্রভাবশালীদের ধান ছড়ানো ছিল প্রতি রুমে। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীরা।

রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস শহীদ জানান- আমরা সাত ভাইসহ ২০ সদস্যের পরিবার একটু আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিলাম। তিনি স্কুল খুলে দেননি। এই শিক্ষক একই গ্রামের লোক হওয়ার পরও এমন আচরণে আমার খুব কষ্ট লাগছে, ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। সাপের ভয়ে আতংকে ছিলাম। গ্রামের প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হাত পা ধরেছি। একটু আশ্রয়ের জন্য তবুও আশ্রয় পাইনি।

৮০ বস্তা ধানের মধ্যে ৪০ বস্তা ধান পচে গেছে। আমরা গরিব মানুষ জমিন বাগি করে অল্প ধান শুকিয়ে রেখেছিলাম। বন্যায় সব নিয়ে গেছে। ৩টা বাচ্চা-স্ত্রী সহ একবেলা খেয়ে কোন ক্রমে দিন কাটাচ্ছি। পানিতে হাটতে হাটতে পা পচে গেছে। আজ পর্যন্ত একটু ত্রান পাইনি। কেউ খোজ নেয়নি।

উপজেলার ছৈলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গয়াস আহমদ জানান, আমি শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। শিক্ষক জাতির মেরুদন্ড আর এই শিক্ষকের কাছ থেকে এরকম আচরনে আমি বাকরুদ্ধ হয়েগেছি। মানুষ একটু আশ্রয়ের জন্য কতদিকে ছুটোছুটি করেছে। নিজের ঘরে বহুলোকের স্থান খাদ্য সব দিয়েছি। আমি বিষয়টা ইউএনও সাহেবের সাথে আলাপ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার দাবি জানাবো।

এদিকে, রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুমিনুর রহমানের ব্যাক্তিগত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গৌছ মিয়া জানান, আমি বিষয়টা জেনেছি তার জন্য কি বলবো বুঝতে পারছি না।

তিনি জানান, কমিটির সভাপতির কাছে চাবি দিয়েছিলেন এমটা জানিয়েছেন শিক্ষক। অথচ চাবি আমার কাছে ছিল না। বন্যার এমন দূরবস্থায় আমার ঘরে ২০ পরিবার কে আশ্রয় দিয়েছি। আমি যা খেয়েছি তাই তাদেরও খাইয়েছি।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, আমি ছাতক ইউএনএ কে বলবো যারা বন্যা কবলিত লোকজনকে সরকারি-প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় দেননি তাদের তালিকা করে গৃহিত ব্যবস্থা নিবো।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়