বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১১ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

মেসির হাতে স্বপ্নের বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

মো. সাহিদ আহমেদ

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৩:২২, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

মেসির হাতে স্বপ্নের বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

স্বপ্নের ট্রফি হাতে সতীর্থদের নিয়ে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী লিওনেল মেসি ছবি: ইন্টারনেট

কি দারুণ মিল ১৯৮৬ সালের ফাইনালের সাথে। সেবার আর্জেন্টিনা ২ গোলে লিড নিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি। দুই কর্নার থেকে দুই গোল করে স্কোর ২-২ করে ফেলে পশ্চিম জার্মানি। পরে দিয়েগো ম্যারাডোনার থ্রু পাস থেকে এই ল্যাটিন দেশটিকে ৩-২ গোলে জয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বকাপ নিশ্চিত করান মিডফিল্ডার জর্জ (হোর্হে) বুরুচাগা। মেক্সিকোর আজটেক স্টেডিয়ামের সেই দৃশ্যই গতকাল ৩৬ বছর পর পুনরাবৃত্তি হলো কাতারের দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে। পার্থক্য হলো সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৯০ মিনিটেই শিরোপা নিশ্চিত করেছিল। আর গতকাল তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জিততে টাইব্রেকার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই স্পট কিকে লিওনেল স্ক্যালোনির কোনো সৈনিকই মিস করেনি।

তাদের প্রত্যেকটি শট জালে যাওয়ায় ৩৬ বছর পর পুনরায় বিশ্বকাপ ঘরে নিলো লিওনেল মেসির দল। ৩-৩ এ ১২০ মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ম্যারাডোনার দেশ ৪-২ গোলে জিতে মাতিয়ে ফেলে পুরো স্টেডিয়াম এবং সারা দুনিয়ায় টিভি পর্দার সামনে থাকা দর্শকদের। সে সাথে অভাবনীয় সাফল্যে শেষটা বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে শেষ করা লিওনেল মেসির। এই ফাইনালে ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক করলেও ২ গোল দিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন মেসি। হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরাও। সে সাথে দিয়েগো ম্যারাডোনার পর একক নৈপূণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দিলেন মেসি। এটি তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপ। আর ফ্রান্স ব্যর্থ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে।

লড়াইটা ছিল আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের। তবে ল্যাটিন এবং ইউরোপিয়ান এই দেশের দ্বৈরথ ছাপিয়ে গেছে মেসি ও এমবাপ্পের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ফাইনালটাও দারুণ উপভোগ্য হয়েছে এই দুই গ্রেট ফুটবলারের অতুলনীয় পারফরম্যান্সে। একজন করেছেন দুই গোল। অপরজন তো ওয়ানম্যান শো। তিন করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ। ট্রফি জয়ের সাথে চলছিল এই দুই পিএসজি সতীর্থের গোল্ডেন বুট জেতার লড়াইও। এতে পেন্ডুলামের মতো ঘুরছিল বিষয়টি। শেষ পর্যন্ত এমবাপ্পেই জিতে নেন তা। সেরা উঠতি ফুটবলারের আর্জেন্টিনার এনজো ফার্নান্দেজ। সেরা গোলরক্ষকের গোল্ডেন গ্লাভস জিতেছেন আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ৮ গোল দিয়ে গোল্ডেন বুট দখলে নিয়েছেন গত বিশ্বকাপের সেরা উঠতি ফুটবলারের ট্রফি জেতা এমবাপ্পে। আর কাতার বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের গোল্ডেন বল জিতে নিয়েছেন মেসি।

গোল দিয়েও তা ধরে রাখতে না পারাটা আর্জেন্টিনার পুরনো অভ্যাস। সেই ১৯৮৬ সালের দুঃসহ স্মৃতিতে যাওয়ার দরকার নেই। এই কাতার বিশ্বকাপেই তাদের ১ গোলে লিড নিয়েও সৌদি আরবের কাছে হারা, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২ গোলে এগিয়ে থেকেও ২-২ এ ৯০ মিনিট শেষ করা, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ গোলে এগিয়েও এক হজম করে কোনো মতে রক্ষা পাওয়া সবই হয়েছে। কাল ফাইনালেও এর বাইরে যেতে পারেনি। তাই প্রথমে ২-০ এবং পরে ৩-২ গোলে এগিয়ে থেকেও তাদের জিততে হয়েছে পেনাল্টি শুটআউটে।

ম্যাচে প্রথমার্ধেই ২ গোলে লিড। সেই ম্যাচে ৮০ ও ৮২ মিনিটে সমতা আনে ফ্রান্স। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ফের লিড আর্জেন্টিনার। কিন্তু অবারো গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের খেলায় ফেরা। ১২০ মিনিট ৩-৩ এ শেষ হওয়ার টাইব্রেকার ভাগ্য আর্জেন্টিনার পক্ষে হেলে পড়ায় শেষ পর্যন্ত শিরোপার উৎসব ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। এতে আর্জেন্টিনার মেসি, পাওলো দিবালা , লিসান্দ্রো মার্টিনেজ গোল করার পর এক শট আগেই শিরোপা উৎসব গোল করতে হতো গনজালো মনটিয়ালকে। তার চতুর্থ শট জালে যাওয়ার সাথে সাথেই বাঁধভাঙা উল্লাস আর্জেন্টিনা শিবিরে। টাইব্রেকারে ফ্রান্সের এমবাপ্পে এবং কোলো মুয়ানে গোল করলেও কোম্যানের শট রুখে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর বাইরে মারেন তোসুমেনে

তবে এমনইতো হওয়া উচিত বিশ্বকাপের ফাইনাল। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা দলের কি দুর্দান্ত ভাবেই না ঘুরে দাঁড়ানো। পুরো প্রথমার্ধে যাদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না, সাথে দুই গোলে পিছিয়ে থাকা তারাই দুই মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করে ফাইনালকে নিয়ে গেল অতিরিক্ত সময়ে। আর এই কাজে ফ্রান্সকে সহায়তা করে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডাররা। বল ক্লিয়ার না করে সে বল নিয়ে ড্রিবলিংয়ে তাদের তাদের এক রক্ষণকর্মী। তার গায়ে গায়ে তখন ফ্রান্সের ফুটবলার। এরপর বলের দখল হারিয়ে পেনাল্টির জন্ম দেয়া। ফ্রান্সের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু তাতেই। কিলিয়ান এমবাপ্পের নেয়া পেনাল্টি শটে ঠিক ডান দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কিন্তু এই ফরাসি স্ট্রাইকারের শটটি এতই নিখুঁত ছিল যে তা রুখতে পারেননি টাইব্রেকার ঠেকাতে দক্ষ এই কিপার। এরপর আবার ডিফেন্স ভুলে পা দেয়। যদিও মাঝ মাঠে মেসির মিস করা বল থেকেই ফ্রান্স আক্রমণে যায়। এরপর সে বল বক্সের ঠিক ভেতরে এমবাপ্পের কাছে এলে ডান পায়ের তীব্র ভলিতে স্কোর ২-২ করে ফেলে।

৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে কোনো গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে মানে ১০৯ মিনিটে মেসি ফের এগিয়ে নেন। তার শট গোল লাইনের ভেতর থেকে ফরাসি ডিফেন্ডার ঠেকালেও মেসি সহকারী রেফারির গোলের সঙ্কেতের অপেক্ষা না করেই শুরু করে দেন গোল উৎসব। পরে রেফারি গোলের বাঁশি বাজার ভারের সাহায্য নেন।

এর আগে ২৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার ম্যাচে এগিয়ে যাওয়া। বক্সে আঞ্জেল ডি মারিয়া ফাউলের শিকার হলে রেফারির দেয়া পেনাল্টি থেকে ৮৮৯৬৬ জন দর্শকের ৯৫ ভাগকে আনন্দে ভাসান মেসি। ৩৬ মিনিটে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে যায় শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ডি মারিয়ার প্লেসিং শটে। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে মেসি এবং আরেক ফুটবলারের পা ঘুরে জুলিয়ান আলভারেজের কাছে এলে তার পাস থেকে গোল ডি মারিয়ার। রাশিয়া বিশ্বকাপেও তিনি গোল করেছিলেন ফ্রান্সের বিপক্ষে। এরপর ফ্রান্সের ম্যাচে ফেরা। তবে ৯০ মিনিটের খেলার অতিরিক্ত ৮ মিনিটের শেষ সময়েই আর্জেন্টিনা জিতে যেতে পারত যদি মেসির শট কর্নার না করতেন বিপক্ষ কিপার হুগো লরিচ। আর এই ম্যাচ টাইব্রেকারে যাওয়ার আগে ফ্রান্সের তৃতীয় এবং টানা দ্বিতীয় ট্রফি জয় হতো আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ১১৯ মিনিটে দারুণ সেভটি না করতেনর

এই জয়ের ফলে আর্জেন্টিনা গত বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে হারের বদলাই নিলো।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়