রোববার ০৪ মে ২০২৫, বৈশাখ ২১ ১৪৩২

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

নতুন রাজনৈতিক দলের হিড়িক, নিবন্ধনের আবেদন ৬৫টির

আলোআভা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৪ মে ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক দলের হিড়িক, নিবন্ধনের আবেদন ৬৫টির

ছবি সংগৃহীত

জুলাই-আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর একের পর এক নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসছে। চলতি বছরের মার্চে নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তির পর নিবন্ধন পেতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তথ্য বলছেগত নয় মাসে দেশে ২৪টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মধ্যে, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। যদিও অধিকাংশ দলেরই নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি, নেই কার্যকরী কেন্দ্রীয় অফিস, এমনকি অনেকের দল গঠনের সঠিক তারিখও অনির্দিষ্ট।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) চলতি বছরের ১০ মার্চ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে। প্রাথমিকভাবে আবেদনের শেষ সময় ছিল ২০ এপ্রিল। পরে বেশ কিছু দলের অনুরোধে এই সময়সীমা জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে ইতিমধ্যে জমা পড়া ৬৫টি আবেদনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অধিকাংশ দলই নামসর্বস্ব। এমন কিছু দলের অস্তিত্ব মিলেছে, যাদের কোনো কেন্দ্রীয় কমিটি বা জেলা পর্যায়ে কোনো কাঠামো নেই। কিছু দল তাদের স্টোররুম কিংবা ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই দলের প্রধান কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করেছে।

নিবন্ধনের আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে রয়েছেবাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি ১৭ এপ্রিল দলটি নিবন্ধনের আবেদন করে। দলের চেয়ারম্যান মো. শিপন ভূঁইয়ার পেশা চশমার ব্যবসা। তিনি জানান, জনগণের খেদমতের লক্ষ্যেই দল গঠন করেছেন। দলের গঠনের তারিখ বা বিস্তারিত কমিটির তথ্য তিনি দিতে পারেননি। দলের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে একটি স্টোররুমের ঠিকানা।

২০ এপ্রিল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেবাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ দলটির সভাপতি আতিকুর রহমান রাজা জানান, তাদের লক্ষ্য বেকার, ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে ৭টি জেলা ৮১টি উপজেলায় তাদের কমিটি গঠিত হয়েছে এবং বাকি শর্ত পূরণে কাজ চলছে। অন্যদিকেবাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলনামের একটি দল জানায়, তারা ১৯৯৮ সালেই দল গঠন করেছিল। দলটির সভাপতি মো. নুর ইসলাম শিকদার বলেন, এর আগেও তারা তিনবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও অনুমোদন পাননি। এবার সব শর্ত পূরণ করে আবার আবেদন করেছেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারীর একটি সুপার মার্কেটে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রয়েছে। তার দাবি, দেশের ২৫টি জেলায় এবং ১০০টির বেশি উপজেলায় তাদের কমিটি রয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে হলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হয়। স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত একটি আসনে জয়লাভ, কিংবা অংশগ্রহণ করা আসনগুলোতে মোট ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ পাওয়া, অথবা কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি অফিসসহ দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় এবং ১০০টি উপজেলা বা থানায় কার্যকরী ইউনিট থাকতে হবে। প্রতিটি ইউনিটে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকতে হবে।

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। নির্বাচন বিশ্লেষক নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য . আব্দুল আলীম বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে যেমন ৯০টির মতো আবেদন এসেছিল, এবারও অনেকেই বড় দলের সঙ্গে আঁতাত করে এক-দুইটি আসন আদায়ের আশায় নিবন্ধনের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সংসদ সদস্য হওয়া এখন বড় এক ব্যবসার মতো। রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে ব্যক্তিগত সুবিধাও অনেকে নিতে চায়।

তিনি আরও বলেন, ছোট দলগুলো অনেক সময় বড় দলের জনপ্রিয় প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, কারণ দেশের অনেক ভোটার এখনো প্রতীক দেখে ভোট দেন। এজন্য কমিশন সুপারিশ করেছে, জোটভুক্ত হলেও দলগুলোকে নিজেদের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক . তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দল গঠন নিরুৎসাহিত করছি না, তবে এভাবে অতিরিক্ত দল গঠন রাজনৈতিকভাবে স্বাস্থ্যকর নয়। অনেক দল জনগণের কাছে যাওয়ার সক্ষমতা পর্যন্ত রাখে না।তিনি জানান, এমন প্রবণতা নতুন নয়। ১৯৭৬ সালেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। তখন শতাধিক দল নিবন্ধন করলেও কার্যত টিকে ছিল মাত্র -৩টি।

বিশেষজ্ঞদের মতেরাজনৈতিক দল গঠনের এই হিড়িকের পেছনে যেমন আছে জনসেবার স্বপ্ন, তেমনি আছে রাজনৈতিক লাভ, পরিচয় তৈরি, বা ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার আগ্রহ। এই বাস্তবতায় নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কঠোরতা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়