মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, আষাঢ় ১৭ ১৪৩২

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

ভিন্ন এক জুলাইয়ের নতুন সূচনা

আলোআভা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫১, ১ জুলাই ২০২৫

ভিন্ন এক জুলাইয়ের নতুন সূচনা

ছবি সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে এসেছে আরেক জুলাই। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দানা বাঁধে গত বছরের এই জুলাইয়ে। পরে জুলাই মাসেই রংপুরের তরুণ প্রাণ আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ শত শত মানুষ শাসকের বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়ানোর নজিরবিহীন সাহস দেখান। বিরলতম সেই আত্মত্যাগে বিজয়ী হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, জনজোয়ারে ভেসে যায় ক্ষমতার দম্ভ। সৃষ্টি হয় নতুন এক বাংলাদেশের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ বছর ধরে যে ফ্যাসিজম বাংলাদেশের বুকে গড়ে উঠছিল, দেশজুড়ে যে অবিচার অরাজকতা তৈরি হয়েছিল, মানুষ তা থেকে মুক্তি চেয়েছিল, যা মানুষের মধ্যে একটি মানসিক ঐক্য তৈরি করেছে। আর সেই ঐক্যের ফলই গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থান, যেখানে তরুণদের মধ্যে আবেগ, দেশপ্রেম নৈতিক চেতনার সংমিশ্রণ ঘটে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম বলেন, ‘আমরা এমন একটি জুলাইয়ের অপেক্ষায় ছিলাম। শুধু ছাত্ররা নই, পুরো জাতিই এই নতুন সূর্য দেখার অপেক্ষায় ছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের সেই দম্ভ চূর্ণ করে আকাঙ্ক্ষিত জুলাই আমরা পেয়েছি। নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিতে চাই।

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নতুন ভিন্নধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ জুলাই রংপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের সমাধি থেকেদেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রাশুরু করবে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ রংপুর গাইবান্ধায় তারা পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করবে। ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)

গত বছরের আজকের এই দিনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে এক উত্তপ্ত জুলাইয়ের গল্প। তবে জুলাই-২০২৫ বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার কাছে স্বাধীন, নতুন বাংলাদেশের নাম। স্বাধীনচেতা বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মের কাছে যে জুলাইয়ের অপেক্ষা ছিল গত ১৫ বছরের। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের শুরু হয়েছিল এই জুলাইয়ে। অকুতোভয় ছাত্র-জনতা, শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, বয়সসব ভেদাভেদ মুছে দিয়ে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতির সম্মিলিত প্রতিরোধ নাড়িয়ে দিয়েছিল স্বৈরশাসকের ভিত্তিমূল। তাই আজকের এই জুলাই একটি নতুন সূর্য, ভিন্ন এক জুলাইয়ের গল্প। যে জুলাই আর কখনোই আসেনি।

দেশের আমজনতা একসঙ্গে জ্বলে উঠেছিল, গত বছরের লাল জুলাই মাসে। ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল জুলাই থেকে, কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে। ছাত্র-সমাবেশ বিক্ষোভ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু এই যৌক্তিক ন্যায্য আন্দোলনকে সহিংস করে তোলা হয় ১৫ জুলাই থেকে। পরে যা সরকার পতনে রূপ নেয়। শুধু ছাত্রদের আন্দোলন নয়, গত বছরের আজকের এই দিনে শিক্ষকরাও তাদের অধিকার আদায়ে মাঠে নেমেছিলেন।প্রত্যয়নামের পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে জুলাই থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন শুরু হয়। টানা বেশ কিছুদিন চলে এই আন্দোলন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক . মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই আর ২০২৫ সালের জুলাই সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভীত-সন্ত্রস্ত একটি পরিবেশ থেকে মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে ফিরতে পেরেছে মানুষ। গত জুলাইয়ে যে ধরনের অন্যায়-অবিচার ছিল, যে পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, সেসব এখন নেই। এখন মানুষ কথা বলতে পারছে। গণমাধ্যমসহ সবকিছুতে এখন অনেকটা মুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে।

তবে জুলাই বিপ্লবের পুরোপুরি ফল অর্জন হয়নি উল্লেখ করে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে ধরনের অরাজনৈতিক ঐক্য তৈরি হয়েছিল, সেটি ব্যাহত হয়েছে। দেশ গড়ার মুহূর্তে ঐক্যটা জরুরি থাকলেও তা নষ্ট হয়েছে। এটি খুব দুঃখজনক। যার ফলে দেশে যে পরিসরে পরিবর্তন হওয়ার কথা, সেটি হয়নি। জুলাইয়ে যারা অভ্যুত্থান করেছে তাদের মধ্যে ঐক্য নেই, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য নেই। এই বোঝাপড়াটা না থাকার কারণে জুলাই সনদ কিংবা জুলাই ঘোষণাপত্রটা হচ্ছে না। যার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তৈরি হতো।

এদিকে, জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তির পরও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং সনদ না হওয়ায় হতাশ ক্ষুব্ধ জুলাই আন্দোলনের সংগঠকরা। এটিকে সরকারের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন তারা। আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে দায়িত্ব নেওয়া এই সরকারের কাছে জনগণের আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল। ছাত্র-জনতার মধ্যে যেই নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেই প্রত্যাশার একটি রাষ্ট্রীয় দলিল হবে জুলাই ঘোষণাপত্র। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা একই সঙ্গে লজ্জিত আশাহত হয়েছি এজন্য যে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়া সরকার এর কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

অন্যদিকে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে ছাত্র-জনতার লড়াই এখনো শেষ হয়নি বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা এই জুলাইয়ের অপেক্ষায় ছিলাম। স্বাধীন, ফ্যাসিস্টমুক্ত একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল এই দেশের ছাত্র-জনতা। গত বছরের জুলাইয়ে সেই স্বপ্নের যাত্রা হয়েছিল। পরে সেটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়ে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। তাই আজকের এই জুলাই আমাদের কাছে অনেক সাধনার। এই জুলাইয়ে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত পথে হাঁটতে চাই। আমাদের লড়াই এখনো চলছে। গণহত্যার বিচার, জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের জন্য আমাদের শেষ লড়াই চালাব। জুলাইয়ের শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ আমরা করবই।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়