
ছবি সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারটা আদালতের রায়ে, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অথবা পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনের মাধ্যমেও হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। দৈনিক যুগান্তরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি আজ মঙ্গলবার পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়।
নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না-এমন এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা দল নিষিদ্ধ করা বা নিবন্ধন বাতিল করা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন দেশে রয়েছে, নজির রয়েছে, আদালতের রায়ও রয়েছে। দল নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারটা আদালতের রায়ে হতে পারে, এটা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অথবা পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনের মাধ্যমেও হতে পারে। এ মুহূর্তেই এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না, বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর ছেড়ে দিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষের মতামতের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপে যদি সব দল মিলে প্রস্তাব করে যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোক বা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে যেন অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া হয় অথবা কোনো আদালতের রায়ের অবজারভেশনে যদি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আসে, তখন অবশ্যই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে’ যোগ করেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান সবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে ফেরত না দিলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের কি আশঙ্কা আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রসঙ্গটি তুলেছেন। তাকে ফেরত পাওয়া আমাদের অধিকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্রক্রিয়ায় যদি ভারত তাকে প্রত্যর্পণ না করে এবং ট্রাইব্যুনালের রায়ে যদি প্রমাণিত হন উনি দোষী, তারপরও তাকে ফেরত না পাঠায়, তাহলে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই এটি একটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা মনে করি, ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, বাংলাদেশের জনমানুষের আবেগ-চেতনাকে সম্মান করতে চায়, তাহলে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করা উচিত।’
ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনাসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন; বিষয়টি সরকার কীভাবে মূল্যায়ন করছে-এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই আপত্তিকর। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে জনরোষের ঘটনা ঘটেছে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ভাঙচুরের যে ঘটনা ঘটেছে-এসবকিছুর জন্য সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনা দায়ী। তিনি উসকানিমূলক, উত্তেজনাকর, আক্রমণাত্মক ও অসত্য বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য দিনের পর দিন দিয়ে চলেছেন, সেটা গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের মনে যে ক্ষত রয়েছে, তা পদাঘাত করার সমতুল্য মনে হয়েছে। আমাদের কষ্ট-বেদনাকে মশকরা করা হচ্ছে, পরিহাস করা হচ্ছে। তার মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনাবোধ নেই। আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলব, আপনারা গণমানুষের রোষ, ক্ষোভ, ক্রোধ যদি অনুধাবন করতে পারেন, তাহলে আপনাদের নেত্রীর মুখ বন্ধ করতে বলেন। বরং আপনারা ওনাকে (শেখ হাসিনাকে) জিজ্ঞাসা করেন, আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে ফেলে উনি ওনার সব আত্মীয়স্বজনসহ বৃহত্তর পরিবারকে আগেভাগে কীভাবে দেশ থেকে সরিয়ে নিলেন? কীভাবে নেতাকর্মীদের ঝুঁকিতে ফেলে নিজে পালিয়ে গেলেন। ওনার এই দলে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্যতা আছে কি না? নেতাকর্মীদের প্রতি ওনার সহমর্মিতা আছে কি না-তার কাছে এই প্রশ্ন করেন।’
আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে চাইলে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। এখনো অনেক সময় বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া এবং জনমতের আরও সুস্পষ্ট প্রকাশ আমরা দেখতে পারব। এটার মধ্য দিয়েই ব্যাপারটা নির্ধারিত হবে। নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় আসেনি, ওইভাবে আলোচনা হয়নি। বিচারিক প্রক্রিয়া আছে, জনমত আছে, সেগুলোর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারিত হবে।’
এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের ভাবনা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি নির্বাচনের যে টাইমলাইন দিয়েছেন, এর কোনোরকম ব্যত্যয় হবে না-এটা বলতে পারি। ড. ইউনূসের কথা সবার বিশ্বাস করতে হবে। আমরা যারা সরকারে এসেছি, আমাদের সংস্কারের কিছু প্রত্যাশা আছে, গণহত্যার বিচারের প্রত্যাশা আছে, সরকারের পক্ষে বিনিয়োগ আনা এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা আছে-সেগুলো প্রত্যাশিত জায়গায় যাওয়া প্রয়োজন। তবে এটা সত্য, নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের আগে এবং ২০২৬ সালের জুনের পরে হবে না। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।’