
ছবি: ইন্টারনেট
দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আরাভ খানই মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম।
সম্প্রতি দুবাইয়ে তার স্বর্ণের দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসানসহ বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গন, বিশ্বের নামী দামী ক্রিকেটারদের অনুষ্ঠানে দাওয়াতের আহ্বান জানিয়ে বেশ আলোচনায় আসে আরাভ জুয়েলার্স। পরবর্তিতে জানা যায়, এই আরাভ জুয়েলার্সের মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম।
সাকিব আল হাসান ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে দুবাইয়ে তার প্রোগ্রামে যোগ দিতে সেদিন রাতেই রওয়ানা দেন। গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একটি রেঞ্জ রোভার গাড়িতে (এফ-৫৫৫৯০) করে দুবাইয়ের দেরা বাজারে আসেন দেশসেরা আলরাউন্ডার। তার সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আরাভ খান।
তবে তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে না উঠে মাত্র ১০ মিনিট সেখানে থেকেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন অপেক্ষায় থাকা হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি।
একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানী রিপোর্টের মাধ্যমে প্রকাশ পায় আরাভ খান একজন হত্যা মামলার আসামি। এরপরই দুবাইয়ের সেই অনুষ্ঠানে সাকিবের যোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনার তৈরি হয়। তবে সাকিবের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে সে স্থান ত্যাগ করার বিষয়টি এর কারণেই কিনা তা জানা যায়নি।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার এই পলাতক আসামির প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। সে বিভিন্ন সময় না পরিবর্তন করে কখনও সোহাগ, কখনও শেখ হৃদয় নামে পরিচয় দিতো।
তিনি বলেন, আমরা তাকে আমরা খুঁজছিলাম। ইতোমধ্যে মামলাটি তদন্ত করে তাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটও দিয়েছে ডিবি। ওই যুবকই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।
হারুন অর রশিদ বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল (আরাভ) পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে চলে যায়, তাকে আমরা খুঁজে পাইনি। পরে আমরা দেখলাম রবিউল ইসলাম আপন নামের একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। তারপর তাকে জেলখানায় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা একটা ফেইক ঘটনা (আত্মসমর্পণ) ছিল। যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করেছেন, তিনি আসলে ভুয়া। আসল আপনের সঙ্গে তার একটা যোগসূত্র বা কমিটমেন্ট হয়েছিল।
জানা যায়, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিউলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও অস্ত্র, নারী নির্যাতন, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধের ৯ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। দুবাই থেকে তাকে দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে চিঠিও দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ।
এদিকে, হত্যা মামলার আসামি রবিউল দুবাইয়ে গিয়ে কীভাবে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নানা মহলে আলোচনা চলছে সে আলোচনা। কয়েক বছর আগেও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছিল তার পরিবার। এখন মা-বাবা ও বোনকে দুবাই নিয়ে গেছেন রবিউল। একটি সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার টাকায় দুবাইতে ব্যবসা শুরু করেন রবিউল। দুবাইয়ের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে রবিউল এক রহস্য। দুবাইয়ে গিয়ে এভাবে বিত্তের মালিক হওয়া ও রাজকীয় চলাফেরা করতে কোনো বাংলাদেশিকে খুব একটা দেখা যায়নি।
পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান বলেন, ইন্টারপোল পুলিশের সহায়তায় রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
ডিবির খিলগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান বলেন, পলাতক আসামি রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লার ছেলে। আপন, সোহাগ, হৃদয় নামেও পরিচিত তিনি। তার পাসপোর্টের তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে।
দুবাইয়ে রবিউলের অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি এখন দুবাই রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দেবাশীষ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিজেকে একজন পারফরমার মনে করি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শোর জন্য আমার সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করেন। সময় আর অর্থের বিষয়টি মিললে শো করি। এই শোটির ব্যাপারে অনেক দিন আগেই যোগাযোগ করা হয়েছিল। আর যার কথা বলা হচ্ছে, দুবাই আসার পর তাকে দেখে আমার তেমন মনে হয়নি। তিনি আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করছেন। তারপরও মানুষের মনে কী আছে, তা তার চেহারা বা আপায়্যন দেখে বোঝা যায় না।
এদিকে আরাভ খানের জুয়েলার্সের দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগর চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, দুবাইয়ে সাকিবের শোরুম উদ্বোধনের খবর আমার জানা নেই।