শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, বৈশাখ ২৬ ১৪৩২

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৭, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন

ছবি: ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্ষীয়ান কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। সময় তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর ছয় মাস। স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ নভেম্বর) কানেকটিকাটে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। খবর সিএনএন। একটি বিবৃতিতে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থাকিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটসজানিয়েছে, জার্মান বংশোদ্ভূত সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে তার নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তবে এতে তার মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি।

চলতি বছর ২৭ মে এক বছর পূর্ণ করেন বর্ষীয়ান এই কূটনীতিক। জার্মান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক বিভিন্ন সময় সেনা সদস্য, গোয়েন্দা কর্মকর্তা কূটনীতিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

অনেকের কাছে নন্দিত হলেও কারও কারও কাছে নিন্দিত হয়ে আছেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে শান্তির বার্তার বাহক যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্বে ফের সর্বোচ্চ শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রভাব বলয় নিয়ে সক্রিয় হয় বিশ্বরাজনীতিতে। কোনো কোনো সময় নৈতিক কূটনীতির বাহক হলেও কখনও আবার বিভিন্ন দেশে উসকে দিয়েছেন বৈপ্লবিক সংগ্রাম ইন্ধন দিয়েছেন সামরিক জান্তা সরকারকে।

তার কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড বৈচিত্রপূর্ণ জীবনকে একটি প্রবন্ধে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। তার কূটনৈতিক কার্যাবলীর নথিপত্রের আনুমানিক ওজন ৩০ টন।

১৯২৩ সালের ২৭ মে জার্মানির শহর নুরেমবার্গের অদূরে হেনরি কিসিঞ্জারের জন্ম নাৎসি জার্মানির শাসনামলে তাদের শিশুদের সঙ্গে ফুটবল খেলায় অংশ নিতে চাইত না শিশু কিসিঞ্জার। সেই সঙ্গে ইহুদিদের ওপর নাৎসিদের চাপিয়ে দেয়া বিধিনিষেধের প্রতিবাদ করতেন তিনি।

ত্রিশ দশকের শুরুতে  যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৈশ স্কুলে ভর্তি করা হয় তাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটায় তার উচ্চশিক্ষায় বাধা হয়ে আসে। সময় সমরকালীন বিশেষ সেনা হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি। পরে তাকে পদোন্নতি দিয়ে প্রশাসনিক কাজে নিয়ে আসা হয়। এভাবে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার অনুরাগ আনুগত্য বাড়তে থাকে। নিজেকে মূল আমেরিকান হিসেবে ভাবতে শুরু করেন তিনি।

১৯৬৯ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তার উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তাকে নানানভাবে সহায়তা করে।

কূটনীতিতে কিসিঞ্জারের দূরদর্শিতা এবং অভিনব পন্থা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোন স্থায়ী বন্ধু কিংবা শত্রু নেই। আছে শুধু জাতীয় স্বার্থ। এমন নীতির মাধ্যমে নৈতিক আদর্শিক কূটনীতিকে পাশ কাটিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন বাস্তবধর্মী জাতীয়তাবাদী পররাষ্ট্রনীতির প্রবর্তক।

উনিশ শতকের বৈশ্বিক রাজনীতি নব্য সাম্রাজ্যবাদের চর্চায় তার বাস্তবধর্মী নীতিমালা হয়ে ওঠে মূল দর্পন। ১৯৭৩ সালে হেনরি কিসিঞ্জারকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়াকে তার নেয়া অভিনব কূটনীতিক কৌশলের প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন অনেকে।

নিক্সন, চৌ এন লাই মাও সে তুংয়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক সম্মেলনের ধারাকে আরও এগিয়ে নিতে হেনরি কিসিঞ্জার চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অচল কূটনীতিক সম্পর্ককে পুনরায় চালু করেন। স্নায়ূযুদ্ধের সেই ঐতিহাসিক বিরোধিতাকে নির্মূল করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত করে ফেলেন। সেই একই সময়ে কিসিঞ্জার চিলিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ইন্ধনদাতার ভূমিকা রাখেন।

একই সঙ্গে আরব দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলে বিপুল পরিমাণে সামরিক অস্ত্র গোলা সরবরাহ করে। ওই অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় এমন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি। এর পর কোন আরব দেশ ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালানো থেকে বিরত থাকে।

চিলির সামরিক অভ্যুত্থান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান,পূর্ব তিমুর কম্বোডিয়ার বোমা হামলায় হেনরি কিসিঞ্জারের বিতর্কিত সম্পৃক্ততা এখনও বিশ্বরাজনীতিতে তাকে নিন্দিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

একাধারে নিন্দিত নন্দিত হওয়া এমন একজন বর্ণাঢ্য কূটনীতিকের পক্ষেই সম্ভব। এটা স্পষ্টই বলা যায় তার সময়কালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নব্য সাম্রাজ্যবাদ বলয়কে অনেক বেশি বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ নিয়ে কিসিঞ্জারের মন্তব্য

চূড়ান্ত স্বাধীনতার ঠিক ১০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে দক্ষিণ এশিয়া পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচনা হয় পশ্চিম পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে। বিশেষ করে মার্চে যে বাংলাদেশে বড় ধরনের খাদ্যসংকট হবে, দুর্ভিক্ষও হবে বিষয়গুলো নিয়ে। এই বৈঠকে বাংলাদেশকে (পূর্ব পাকিস্তান) তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়।

১৯৭১ সালের সেই বৈঠকের পর বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এলেইবাস্কেট কেসবলা শুরু করে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো। যেমন, বাংলাদেশের খাদ্যসংকট খাদ্যসাহায্য নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৭২ সালের অক্টোবর যে সম্পাদকীয় লিখেছিল, তার শিরোনাম ছিলবাস্কেট আবার বাকশাল কায়েমের পর ১৯৭৫ সালের ৩০ জুন প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল, ‘ওয়ান ম্যান বাস্কেট কেস

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়