রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

জবি ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম বাড়িয়ে কমিয়েছে মান, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

নীলপদ্ম রায় প্রান্ত

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ২৭ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১৮:৩২, ২৭ আগস্ট ২০২৩

জবি ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম বাড়িয়ে কমিয়েছে মান, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

ছবি সংগৃহীত

হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভর্তুকির অভাবের কারণ দেখিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম বাড়িয়েছে। অন্যদিকে  নিম্নমানের খাবারের উচ্চ মূল্য যেন শিক্ষার্থীদের জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরসাথে ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম বাড়ানোর সাথে সাথে নিম্ন মানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি মাত্র ক্যাফেটেরিয়া যা অবকাশ ভবনে অবস্থিত এবং নতুন ভবনের ১৩ তলায় শিক্ষক লাউঞ্জের অবস্থিত টিচার্স ক্যান্টিন। কিন্তু টিচার্স ক্যান্টিনের খাবারের মূল্য শিক্ষার্থীদের নাগালের বাহিরে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাফেটেরিয়ায় শুধু খাবারের সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে বসার জায়গারও সমস্যা এবং কর্মচারীর সংকট। রান্নাঘরের অবস্থা ও নাজেহাল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার। প্রায়ই আসনের অভাবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ক্যাফেটেরিয়ায় মধ্যে বসে খাওয়ার জন্য কয়েকটি টেবিল থাকলেও নেই পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা। হাতে গোনা কয়েকটি বেঞ্চ ও কয়েকটি ভাঙ্গা চেয়ার।

ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম বেশি থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বাইরের ফুটপাতের কমদামি খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে ফুটপাতের খাবার খেয়ে নানা ধরণের পানিবাহিত রোগ যেমন- ডায়রিয়া, আমাশয়ের মত পেটের পীড়ার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

বিভিন্ন সময় ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি বাড়ানো, খাবারের দাম কমানো ও মান বাড়ানোর দাবি জানিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

কয়েকজন শিক্ষাথী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমনিতেই আমাদের মেসে থাকতে হয় ফলে খরচ বেশি হয়। ক্যাম্পাসে এসে অপেক্ষাকৃত কম দামে খাবো কিন্তু সেখানেও দাম অনেক বেশি কিন্তু খাবারের দাম বাড়লেও খাবারের মান আগের তুলনায় কমেছে। ফলে অনেক সময় না খেয়েই ক্লাস করতে হয়।

জানা যায়, ক্যাফেটেরিয়ায় ব্যবহারকৃত গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল ছাড়া আর কোনও ভর্তুকি বা সুবিধা দেয়া হয়না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফলে শিক্ষার্থীদের টাকায় চলে ক্যাফেটেরিয়া। উচ্চমূল্য দিয়ে মানসম্মত খাবার পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।

ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের অবস্থা: অবকাশ ভবনে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। দেখা যায় প্রতিদিনই কাউন্টারে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন লেগেই থাকে। খাবার নিয়ে এলেও বসার জায়গা পাওয়া দুষ্কর। একসঙ্গে ৫০ থেকে ৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থী খেতে পারে না। ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের আইটেম খুব সীমিত। সকালের নাস্তায় আধা সিদ্ধ পরটা, ডাল/ভাজি, ছোট ছোট সিংগারা (ভেতরে সবজি কখনো কখনো পঁচা পাওয়া যায়), এর সঙ্গে পাতলা সস এই হল জবি ক্যাফেটেরিয়ার সকালের নাস্তা। আর দুপুরের খাবার মানেই তেহারী আর নামে মাত্র ভাত এবং মোরগ/মাছ আর বিকালে/সন্ধ্যায় পরটা, সিদ্ধ বুট, লুছি এবং ডাল যা বাহিরের দামের সমান।

পরোটার দাম ৫ টাকা, ছোট ছোট সিঙ্গারা ৪ টাকা যা আগে ছিল ৩ টাকা। কফি ১৫ টাকা যা আগে ছিল ১২ টাকা। ডাল/ভাজি ১০ টাকা, তেহারী ৫০, খিচুরী ৩৫ টাকা, ভাত এবং মোরগ/মাছ ৪৫ টাকা যা খুবই নিম্নমানের যা বাহিরের দামের সমান। তাও আবার সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা এই সব নিম্নমানের খাবার বেশি দাম দিয়ে খেতে হচ্ছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসাইন সিফাত বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান খুব একটা ভালো নয়। তবুও বাধ্য হয়ে আমরা এখান থেকেই খাই। আমি কালকে দুপুরে খাবার খাচ্ছি খাবার খাওয়ার এ পর্যায়ে দেখি আমার খাবারে পোকা আর তাদের প্লেট গুলা সকাল টু সন্ধ্যা একটানা ব্যবহৃত হচ্ছে, ক্লিনিং সিস্টেম এতোই বাজে যে সকালে নাস্তায় পরোটা নিলে পরোটা ভিজে ফুলে যায়। পরোটা তো পরোটা নাহ, যেনো রাবার গিলে খাচ্ছি। যেখানে সিংগারা, সমুচা, পরোটা বানানো হয় জায়গাটার দিকে তাকানো যায় নাহ কালো হয়ে নোংরা হয়ে আছে। এ অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়লে এর দায়ভার কে নিবে?

এ বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক মাসুদ বলেন, ক্যাফেটেরিয়াতে জায়গার সংকীর্ণতা আছে। এ জন্যই শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা কম। মাঝেমধ্যে খাবারের লাইনও বড় হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের কোনো ভর্তুকি দেওয়া হয় না। আমরা সবসময়ই শিক্ষার্থীদের ভালো খাবার দিতে চাই। খাবারের পোকা পাওয়া যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেনি।

এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে ক্যাফেটেরিয়া থেকে দাম বাড়ানোর দাবি আসছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে আমরা দাম বাড়াতে দিইনি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণই আমাদের মূল লক্ষ্য। খাবারের পোকার থাকার বিষয় জানতে চাইলে আরো বলেন আমি এই বিষয়ে অবগত নই।

উল্লেখ, ক্যাফেটেরিয়ার পাশেই রয়েছে একটি শৌচাগার। যেটা দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কার ও পরিষ্কার করা হয় না। ফলে সেখান থেকে বের হয় মারাত্মক দুর্গন্ধ। যে দুর্গন্ধ ক্যাফেটেরিয়ার ভেতর পর্যন্ত পৌঁছায়। বরাবরের মতই ক্যাফেটেরিয়া নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করে প্রশাসন। ক্যাফেটেরিয়ার সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোনো চিন্তা নেই বললেই চলে।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়