শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

আব্দুর রাজ্জাকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১১:৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

আপডেট: ১১:৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

আব্দুর রাজ্জাকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

রা্জু আনোয়ার: ছাত্রজীবন থেকে আমৃত্যু বাঙালি জাতির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রথমসারির সংগঠক জননেতা আব্দুর রাজ্জাক।সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী রাজ্জাক তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাঙালির স্বাধিকার, স্বাধীনতা, শান্তি ও সামাজিক মুক্তির আন্দোলনে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য,জননেতা আব্দুর রাজ্জাক লন্ডনে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪২ সালের ১ আগস্ট শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা গ্রামে আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম। ১৯৫৮ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন । ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং পরে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন রাজ্জাক ।এরপর এলএলবি পাস করে ১৯৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিল’র নিবন্ধিত হন তিনি । ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজ্জাকের রাজনৈতিক জীবনের গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬০-৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন তিনি ।১৯৬২-৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র-ছাত্রী সংসদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৩-৬৫ সাল পযর্ন্ত তিনি ছাত্রলীগের সহঃ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন । এই সময়ই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পযর্ন্ত তিনি পর পর দুই বার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের শাসনামলে ১৯৬৪ সালে প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন রাজ্জাক । কারাগার থেকেই মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর ৬ দফা আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৬৭ সাল থেকে ’৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো  প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুর রাজ্জাক । ১৯৬৯ থেকে ৭২ সাল পযর্ন্ত তিনি আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের প্রধান ছিলেন । মুক্তিযুদ্ধের সময়  রাজ্জাক ভারতের মেঘালয়ে মুজিব বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার (মুজিব বাহিনীর ৪ সেক্টর কমান্ডারের একজন ) ছিলেন । তিনি মুজিব বাহিনীর একজন সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষকও ছিলেন । রাজ্জাক সেসময় দেরাদুনে ভারতের সেনাবাহিনীর জেনারেল উবানের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন । মুজিব বাহিনী গঠনে অন্যতম রূপকার ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক  । আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পযর্ন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাতকরা হত্যা করার পর আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার হন। ’৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি কারাবন্দী ছিলেন। প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ  বলেন, আব্দুর রাজ্জাক  ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন বলিষ্ঠ সৈনিক । মুক্তিযুদ্ধে তিনি দক্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুজিব বাহিনীর চারজন কর্ণধারের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। তিনি বলেন,পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিল্লুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক এবং আমাকে (তোফায়েল আহমেদ) গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখন জিল্লুর রহমান এবং আব্দুর রাজ্জাককে মানসিক এবং আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল। ১২ দিন আমাদের অজ্ঞাতস্থানে রাখা হয়েছিল।আমি এবং আব্দুর রাজ্জাক এক চৌকিতে ঘুমিয়েছি। ১৯৭৫ সালে দেশে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল গঠন করা হয় । আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭৫ থেকে থেকে ১৯৭৮ সাল পযর্ন্ত বাকশালের সম্পাদক ছিলেন। ইতোমধ্যে জেনারের জিয়া দেশে বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তন করলে আওয়ামী লীগ পুনগঠিত হয় এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন । এরপর ১৯৮৩ সালে  উদ্যোগী হয়ে পুনরায় বাকশাল গঠন করেন রাজ্জাক এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি এই বাকশালের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে এরশাদের পতনের পর বাকশাল বিলুপ্ত করে তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন । ’৭১-এর ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন রাজ্জাক। সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৭ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩,১৯৯১,১৯৯৬,২০০১ ও ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকা শরীয়তপুর -৩ (ডামুড্যা-গোসাইরহাট) থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৯১, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি  ২টি করে আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৯ পযর্ন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পানিসম্পদমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৯৭ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনের কিংস হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন জননেতা রাজ্জাক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ত্যাগী ছাত্রনেতা এবং পরবর্তীতে সৎ ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য এই রাজনীতিবিদ আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সারাজীবন নেতৃত্ব প্রদান ও নিরলস কাজ করে গেছেন। জননেতা আব্দুর রাজ্জাকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ  ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন ,ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। একটি উন্নত সমৃদ্ধ সুখী,সুন্দর অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে জননতো আব্দুর রাজ্জাকের অবদান অনন্য ।বাঙালি জাতির স্বাধীনতা,অথনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির আন্দোলনে তাঁর স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে আজীবন। আলোআভানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরএ    
শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়