গুজবের বলি মা, শিশু তুবার কান্না….

রাজু আনোয়ার: মা কোথায় জানে না ছোট্র শিশু তুবা । রাত পেরিয়ে দিন-দিন শেষে রাত এভাবে গত হলো তিনদিন । তবু মা আসছে না তুবার ! মায়ের জন্য বার বার কান্না করছে শিশুটি। মায়ের ফিরে আসার অপেক্ষায় গত তিনদিন ধরে এভাবেই দিন গুনছে অবুজ সন্তানটি। কেউ জিজ্ঞাসা করলেই বলছে, ‘মা ড্রেস আনতে নিচে গেছে’।
কিন্তু মা তো এলো না,তার কান্নাও থামছে না । অবুঝ সন্তানটিকে সান্ত্বনা দেবার সাধ্য কার? এ ভাষা খোঁজে পাচ্ছে না কেউ। আশপাশের মানুষজনও যেন এ ব্যাপারে বধির হয়ে গেছে । কান্নায় শোক ছড়িয়ে তারাও আজ অশ্রুসিক্ত । শোকের মাতম চলছে নিহত তাসলিমা রেনুর স্বজনদের মধ্যে । কিন্তু কি অপরাধ ছিল রেনুর ? এর জবাব আছে কার কাছে ?
শনিবার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান মা তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে টেনে বের করে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।
জানা যায়,রেনু তার মেয়েকে ভর্তি করার জন্য স্কুলে যান। কিন্তু মানসিক অসুস্থতার কারণে তার আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। এজন্য স্কুলের অনেকেই তাকে ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করছিল। প্রধান শিক্ষক তার সাথে কথা বলার জন্য রুমে নিয়ে যান। কিন্তু স্কুল প্রাঙ্গণে তার অস্বাভাবিকতা দেখে অনেকেই বের করে মারধর করতে চাইছিলেন। প্রধান শিক্ষক রেনুকে বাইরে বের না করলে, স্কুলের কিছু অভিভাবক ও বাইরে থেকে আসা উৎসুক জনতা রুমের গেট ভেঙে তাকে ‘ছেলেধরা’ বলে মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেকে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেনুকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রয়াত রেনুর প্রতিবেশী নূরজাহান বেগম বলেন ,ছোট্ট শিশুর কান্নায় আমরা আর সইতে পারছি না। সে তার নানি ও খালাদের সঙ্গে আছে । তবে ভবিষ্যতে তার কী হয় আল্লাহ-ই ভালো জানেন!
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেনুরা একভাই ও পাঁচবোন। তিনি ছিলেন সবার ছোট। পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছেন। টিউশনিও করাতেন। পারিবারিক কলহের কারণে বছর দুয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর ছেলে তাসফিক আল মাহী (১১) বাবার সঙ্গেই থাকছে। আর মেয়ে তাসলিমা তুবাকে (৪) নিয়ে তিনি থাকতেন মহাখালীতে। স্বজনেরা জানান, আগামী বছরের জানুয়ারিতে বড়ভাই আলী আজগরের কাছে আমেরিকায় যাওয়ার কথা ছিল রেনুর।
শনিবার ঢাকার বাড্ডায় গুজব ছড়িয়ে এই নিরীহ নারীকে গণপিটুনিতে হত্যার পর রোববার সন্ধ্যায় রেনুর লাশ তাদের নিজ বাড়িতে আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে । নিহত রেনুর বৃদ্ধা মা ছবুরা খাতুনসহ স্বজনদের মাতমে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।এ সময় পরিবারের লোকজন এঘটনার বিচারের দাবি জানিয়ে । প্রধানমন্ত্রী গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যার শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রোববার (২১ জুলাই) রাতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাসলিমা রেনুকে দাফন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা ।
নিহতের ভগ্নিপতি বদিউজ্জামান বলেন, অভিভাবকরা সন্তান ভর্তি করার জন্য স্কুলে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে গুজব ছড়িয়ে একজন শিক্ষিত-সংগ্রামী নারীকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করতে হবে। এ সভ্য সমাজে এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতার করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিহতের মরদেহ শনাক্ত করেন তার ভাগিনা ও বোন রেহানা। নিহতের ভাগিনা নাসির উদ্দিন বলেন, রেনু মানসিক রোগে ভুগছিলেন। চার বছর বয়সী মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য তিনি এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে ঘুরছিলেন। এ কারণেই হয়তো তিনি বাড্ডার ওই স্কুলটিতে যান ।
ঘটনার দিন রাতেই বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাগিনা নাসির উদ্দিন। মামলায় বলা হয়েছে, অতর্কিতভাবে ওই নারীকে স্কুলের অভিভাবক, উৎসুক জনতাসহ অনেকে গণপিটুনি দেয়। এতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি জড়িত।
এ ঘটনায় এ পযর্ন্ত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, গণপিটুনির ঘটনায় কামাল ও আবুল কালাম আজাদ নামে আরো দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি জানান, গণপিটুনির ঘটনায় মোবাইলে ধারণকৃত একটি ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জড়িত অন্যদের শনাক্তপূর্বক গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে রোববার (২১ জুলাই) দিনগত রাতে জাফর, শাহীন ও বাপ্পী নামে তিনজন এবং সোমবার সকালে বাচ্চু নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের চারজনকে সোমবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তিন জনের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এরই মধ্যে হত্যায় জড়িত বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছেন অভিযুক্ত আরেক ব্যবসায়ী জাফর হোসেন।বাড্ডার একটি স্কুলের ভেতর নৃশংসভাবে রেনুকে পিটিয়ে হত্যা ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া এক যুবকের নাম হৃদয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ও গোয়েন্দারা যে ৮ জনকে শনাক্ত করেছে, তাদের মধ্যে ৫ জনকে আটক করলেও হৃদয় এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনের কাছ থেকে হৃদয়ের অবস্থান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দারা জানিয়েছে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে বারবার নিজের অবস্থান বদল করছে হৃদয়।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণে মাথা লাগবে- একটি মহল এমন গুজব ছড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি একটি ফৌজদারি অপরাধ। আইন নিজের হাতে তুলেন নেবেন না। গণপিটুনির ঘটনা তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
শনিবার বিকেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গুজবে কান দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শামিল। এছাড়া গণপিটুনি দিয়ে মানুষ মারাকে বড় ধরনের অপরাধ। এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।
গত ১৫ দিন আগে প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হয় পদ্মা সেতু নির্মাণে এক লাখ মানুষের মাথা দরকার হবে। এর এ জন্য ৪২টি দল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা শিশুদের হত্যা করবে।
সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, সেতু করতে মানুষের মাথা দরকার পড়ে না। যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ এমন গুজব ছড়ানোর দায়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। শুক্রবার র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, র্যাব-১ এর সাইবার মনিটরিং সেল কিছুদিন আগে Newseye24.Com নামে একটি নিউজ পোর্টাল শনাক্ত করে। নিউজ পোর্টালটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা যায় যে, নিউজ পোর্টালটি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গুজব সৃষ্টি করে জনমানুষের মধ্যে ভীতি ছড়ানোসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
অতি সম্প্রতি পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে যা সংগ্রহে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিষাক্ত স্প্রে পার্টির ৪১টি দল বের হয়েছে। যারা স্প্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষের মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে নিউজ পোর্টাল থেকে একটি ভিত্তিহীন গুজব পোস্ট করা হয়। নিউজটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয় এবং জনমনে ভীতি সঞ্চার করে।
এ ঘটনায় নিয়ে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তি জানতে পেরে আকরাম হোসেনকে (৩৩) আশুলিয়ার ইপিজেড রোড সংলগ্ন টঙ্গা বাড়ি এলাকা থেকে মোবাইল ও কম্পিউটারসহ গ্রেফতার করা হয়। আকরাম হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ২০০৫ সালে পাবনার একটি স্থানীয় মাদরাসা থেকে ফাজিল পাস করে। বর্তমানে আশুলিয়ার ইপিজেড এলাকায় একটি হেভি ইকুপমেন্ট মেশিনারিজের দোকানে কর্মরত।
এএসপি মিজানুর রহমান বলেন, একইভাবে ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন গুজব ছড়ানোর দায়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও কয়েকজনকে আটক করেছে র্যাব। এদের মধ্যে নড়াইল থেকে মো. শহীদুল ইসলাম (২৫), চট্টগ্রাম থেকে আরমান হোসেন (২০), মৌলভীবাজার থেকে মো. ফারুক এবং কুমিল্লা থেকে হায়াতুন্নবীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে।
এদের গ্রেফতার করা হলেও গুজবের জের কেটে যায়নি । গুজবেব পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে মানুষ মারা যাচ্ছে। এই গণপিটুনি দেওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে দেখা যায় কিশোর। এরমানে একটা কিশোর গ্যাং কাজ করছে। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ।
গত বুধবার নেত্রকোণায় একটি শিশুকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় একজনকে গণপিটুনিতে হত্যার পর গুজব ডালপালা মেলেছে । এই নির্মম গুজবের শিকার কেবল শিশু তুবার মাই নয়। গণপিটুনিতে গত শনিবার তিনজন মারা গেছেন। গত রোববার নির্মম পিটুনিতে আরেকজন নারীর প্রাণ হারানোর খবর পাওয়া গেছে। ছেলেধরা সন্দেহে শনিবার ওই নারীকে পেটানো হলে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রোববার সেখানে তার মৃত্যু হয়।
একই দিনে ছেলেধরা সন্দেহে বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনিতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১ জন। তার মধ্যে নওগাঁয় ছয়জন, টাঙ্গাইলে একজন এবং কুমিল্লায় রয়েছেন চারজন। তেঁতুলঝোড়া এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত এক নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। শনিবার দুপুরে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নে জনতার পিটুনিতে গুরুতর আহত হন তিনি।
সাভার মডেল থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, ছেলেধরা সন্দেহে ওই নারীকে পিটুনি দেয় তেঁতুলঝোড়া এলাকার লোকজন। তবে কোন বাড়ির কার ছেলেকে তিনি ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তা কেউ বলতে পারেননি। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় গত শনিবার ছেলেধরা সন্দেহে ছয় ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মান্দা থানার ওসি মোজাফফর হোসেন বলেন, পুকুরে মাছ ধরা নিয়ে দ্বন্ধের জেরে গ্রামবাসী ‘ছেলেধরা’ গুজব রটিয়ে ছয় ব্যক্তিকে মারধর করেছে। গত রোববার কুমিল্লায় ছেলেধরা সন্দেহে ৬০ বছরের দুই বৃদ্ধ ও ৫০ বছরের এক নারীকে পিটিয়ে আহত করার খবর পাওয়া গেছে। গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়, টাঙ্গাইলে সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের কান্দিলা বাজারে গণপিটুনিতে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কেন এমন হচ্ছে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাচ্ছে। কুমিল্লায় আদালতে হামলার ঘটনা সেটিরই আলামত। এখন পদ্মা সেতু যাতে না হয় সেজন্য প্রথমে গুজব ছড়িয়ে পরে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ মারার ঘটনাও ওই গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের অংশ।এ গোষ্ঠী দেশের উন্নয়ন চায় না।’
অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলেন,‘গণপিটুনিতে মানুষ মারা যাচ্ছে। এটি উদ্বেগের বিষয়। পুলিশ কি করছে? যদি এটি কোনো গোষ্ঠীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে তবে গোয়েন্দা বিভাগেরই উচিত সেই ষড়যন্ত্রকারীদের সনাক্ত করা। আমরা আইনের শাসন চাই।আমরা গণপিটুনিতে মানুষের মৃত্যু চাই না।’
মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক মোহিত কামালের মতে, এমন নিষ্ঠুর এমন হিংস্রভাবে মারতে দেখলাম যে, আমরা আর ভিডিওটা দেখতে পারছি না। আমরা নিজেরা আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। কাদের এমন হিংস্রতা হয়? কার এ নিষ্ঠুরতা করে দেখাতে পারে? যাদের ব্যক্তিত্বের মধ্যে পাষন্ডতা আছে, নির্মমতা আছে, হিংস্রতা আছে। এটা কোন অসুখ না। আমি তাকে রোগি বলবো না। রোগি বলার সাথে সাথে সে কিন্তু আইনের বিভিন্ন সুযোগ পেতে পারে। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। কিছু লোককে লেলিয়ে দেয়া হতে পারে যে, সমাজের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করো। আশান্তি তৈরি করো এবং সেটি সরকারের জন্য ক্ষতিকর হবে। এটাও হতে পারে। সরকারকে এটা মাথায় রাখতে হবে।’
সমাজবিজ্ঞানি নেহাল করীমের মতে, এই সমস্যা সমাধানে এখনই কঠোর শাক্তি প্রয়োগ করে কাজ শুরু করতে হবে সমাজের গোড়া থেকেই। তিনি বলেন, ‘সমাজে কেউ স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে। আর কেউ না পারুক, অন্তত গোয়েন্দাদের উচিত এটা খুঁজে বের করা। আমাদের দুরভাগ্য যে, আমাদের দেশে সব ধরনের আইন আছে। কিন্তু তার কোনো প্রয়োগ নেই।’
মঙ্গলবার (আজ) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন,ছেলেধরা’ বিষয়টি নিছক গুজব। এ ধরনের ঘটনায় গণপিটুনিতে অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটালে অবশ্যই আমরা তাকে আইনের মুখোমুখি করবো। আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতেই হবে।তিনি বলেন, একশজন যদি এ ঘটনা ঘটান তার শাস্তি কিন্তু একই রকম হবে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটালে অবশ্যই আমরা তাকে আনের মুখোমুখি করবো। আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতেই হবে। ঘটনার সত্যতা না জেনে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে আবেদন করুন যাতে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা আর না ঘটে। এরই মধ্যে কয়েকজন এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার শিকার হয়েছেন। আমরা বসে নেই। সবগুলো ঘটনা সামনে এনে ভিডিওফুটেজ দেখে কারা কারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আলোআভানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরএ